
প্রাপ্তবয়স্ক সাঁতার না জানা এক ব্যাঙ থাকে অল্প পরিমাণ জলে। গলা জলে ভয় পেলেও কোমর জলে নেমে সে মাঝে মাঝে কোনোরকমে ডুব দেয়; পানির নীচে চোখ খুলে কালচে-সবুজ রঙের দুনিয়াকে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। কত কিছু ভাবে কিন্তু আকাশ-পাতাল এর কূল খুঁজে পায় না।
পানিতে বাস করা পোকা-মাকড় আর কীট নিয়ে সে নিজে নিজে কাহিনী তৈরি করে, গল্প বানায়। যদিও কুয়ার মধ্যে এই ব্যাঙের সাথে আরো অনেক ছোট-বড় ব্যাঙ থাকে, তবে তারা প্রত্যেকেই মোটামুটি সাতার জানে কিন্তু এ কুয়ার ব্যাঙ আবার সাতার জানে না। সাতার জানা ব্যাঙগুলির মধ্যে কেউ কেউ তাকে পছন্দ করে, কেউবা খুব। আর কেউবা পছন্দ করা তো দূরের কথা, সহ্যই করতে পারে না এবং তাদের সংখ্যা অনেক।
পানিতে বাস করা পোকা-মাকড় আর কীট নিয়ে সে নিজে নিজে কাহিনী তৈরি করে, গল্প বানায়। যদিও কুয়ার মধ্যে এই ব্যাঙের সাথে আরো অনেক ছোট-বড় ব্যাঙ থাকে, তবে তারা প্রত্যেকেই মোটামুটি সাতার জানে কিন্তু এ কুয়ার ব্যাঙ আবার সাতার জানে না। সাতার জানা ব্যাঙগুলির মধ্যে কেউ কেউ তাকে পছন্দ করে, কেউবা খুব। আর কেউবা পছন্দ করা তো দূরের কথা, সহ্যই করতে পারে না এবং তাদের সংখ্যা অনেক।
যেসব ব্যাঙ তাকে পছন্দ করে, তাদের সাথে তার খুব ভাব। সকাল-সন্ধ্যা শুধু আড্ডা আর গল্প, গল্প আর আড্ডা। বন্ধুদেরকে সে পোকামাকড়ের গল্প শোনায়; অমুক সালের মধ্যে এই করবো, ওই করবো বলে। বন্ধুরাও তাকে কুয়ার ভেতরের দুনিয়াদারি নিয়ে অনেক কিছু বলে। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন।
হঠাৎ একদিন কুয়াতে হাজির হয় এক বুড়ো ব্যাঙ। সাক্ষাৎও হয়ে যায় তাদের দুজনের মধ্যে। আস্তে আস্তে হয় বন্ধুত্বও। বুড়ো ব্যাঙটি বয়স-জ্ঞান-অভিজ্ঞতায় সবকিছুতেই পরিণত। খাল-বিল-নালা-ডোবা-নদী পাড়ি দিয়ে সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছেছে। অনেকের সাথে মিশেছে, অনেক কিছু দেখেছে, অনেক কিছুই বোঝে সে। বুড়ো ব্যাঙের কাছে সাত সমুদ্র তের নদীর গল্প শোনে সে মন্ত্র-মুগ্ধ হয়ে।
শুনতে শুনতে সে ভেবে পায় না তার এই কুয়ার থেকেও আরও বড় কোন কুয়া আছে? এটা কিভাবে সম্ভব? খাল-বিল-নদী-সমুদ্র এগুলো আবার কি? এ কুয়ার যে হাটু জলে সে প্রায়ই ডুব দেয়, এরকমই কিছু একটা হবে হয়তো। তবে পুরোপুরি আন্দাজ করতে পারে না। স্বপ্ন দেখতে শুরু করে সেও একদিন পাড়ি দিবে কুয়া, নালা-ডোবা-নদী পার হয়ে পৌঁছুবে সমুদ্রে। এবং এ কথা বুড়ো ব্যাঙটির কাছে বলে।
বুড়ো ব্যাঙটি তাকে বলে, বন্ধু তুমি এই কুয়া থেকে বের হতে চাও, ভালো কথা। কিন্তু তোমাকে তো আগে সাতার শিখতে হবে। সাতার না জানলে তো তুমি এ নালাই পার হতে পারবে না, সমুদ্র তো দূরের কথা।
কুয়ার ব্যাঙটি হাসে আর বলে; হবে, হবে। সব হবে।
অনেক অনুরোধ'এর পরে বুড়ো ব্যাঙটি একবার ছোট ব্যাঙটিকে হাত ধরে কাছের অন্য এক নালা-ডোবাতে বেড়াতে নিয়ে যায়, সেখানে বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বুড়ো ব্যাঙটির বন্ধুরা অনেকে সমুদ্র বেড়িয়ে এসেছে, কেউবা সমুদ্র না গেলেও নদী পর্যন্ত গিয়েছে। রাতভর খাওয়া-দাওয়া আড্ডা-ফুর্তির পাশাপাশি একেকজন করে তাদের সমুদ্র ভ্রমণের কথা বললো, কেউবা বললো নদী ভ্রমণের কথা। কুয়ার ব্যাঙটি তন্ময় হয়ে শোনে। ইশ! একবার যদি সমুদ্রে যাওয়া যেত, তবে কি মজাই না হতো!
বুড়ো ব্যাঙটি বারেবারে বলে, বন্ধু তুমি সাতার শেখো। না হলে কোথাও যেতে পারবে না। কুয়াতেই পড়ে থাকতে হবে।
কুয়ার ব্যাঙ হাসে আর বলে; হবে, হবে। বন্ধু, সব হবে।
নালা-ডোবা বেড়িয়ে যখন কুয়ার ব্যাঙটি নিজের কুয়োতে ফিরছিল, তখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে বুড়ো ব্যাঙ তাকে কাধে তুলে নেয় এবং বন্ধুকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
কুয়াতে ফিরে এসে ব্যাঙটি তার আগের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে, অনেক গল্প করে তাদের সাথে। তাদের ডোবা-নালা, সমুদ্র ভ্রমণের পরিকল্পনার কথাও জানায়। বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে, তুমি তো সাতারই জানোনা তবে কিভাবে কি ? আর এই কুয়া বর্ষার সময় ভরে গেলে পার হবে কি করে? ডুবে মারা যাবেতো!, নয়তো লতা-পাতা ধরে ঝুলে থাকতে হবে। গতবারের মতো এবারও কি তাই করবা না কি?
কুয়ার ব্যাঙটি হাসে আর বলে: হবে, হবে। সব হবে।
স্বপ্ন দেখতে থাকে বুড়ো ব্যাঙ আবার তাকে পার করে দিবে মাথায় করে। তারপর সমুদ্রে গিয়ে রাত-দিন ঘুরবে। চক্কর খাবে ঢেউয়ের কোলে। ইশ! কত আনন্দ! কত সুখের দিন সামনে অপেক্ষা করছে!
কিন্তু বর্ষা চলে আসছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে বুড়ো ব্যাঙটি কুয়ার ব্যাঙের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। খুব চিন্তায় পড়ে যায় কুয়োর ব্যাঙটি। যে করেই হোক বর্ষার আগে এখান থেকে বেরোতে হবে। নয়তো নির্ঘাৎ মৃত্যু।
এই ভেবে সে বুড়ো ব্যাঙটির কাছে বার্তা পাঠায় নানাজনের মাধ্যমে। কিন্তু কোনো উত্তর দেয় না সে। অবশেষে একদিন উত্তর দিলো অন্য জনকে দিয়ে, "বন্ধু আমি অসুস্থ। নানা কাজে ব্যস্ত। তারওপর বর্ষা চলে আসছে। আমি তোমার ওখানে আসতে পারবো না। তুমি ভালো থাকো। বর্ষার পরে কথা হবে।"
কিছুক্ষণ পরেই বর্ষার বৃষ্টির ফোটা পরতে লাগলো কুয়াতে। কুয়ার মধ্যে জন্মানো লতা-পাতা গাছের কোণে ব্যাঙটি চুপটি মেরে আছে সে আর মনে মনে ভাবছে; "এবার আর নিস্তার নেই যে করেই হোক সাতার শিখতেই হবে"।
এর মধ্যে বৃষ্টির পরিমাণ এত বাড়া-বাড়ছে তাতে আর সাহস হচ্ছে না এই পানিতে সে কি করে নামবে। নামলেই তো শেষ! ল্যাঠা চুকে যাবে।
পাঠক, কুয়োর ব্যাঙের মত রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের ভার আমরা কেন বয়ে বেড়াবো ? বিভিন্ন দোহাইয়ে আমরা কেন নির্ঘুম রাত কাটাব? সময় কেন কাটবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়? কেন আমরা মূক ও বধিরে আক্রান্ত। আমাদের পায়ে কেন শান্তির নামে বেড়ী পরানোর পাঁয়তারা?
কুয়োর ব্যাঙ থেকে মুক্তি চাই !
No comments:
Post a Comment