কালের কলম ।। আরিফুল ইসলামঃ
"যে সাদা বাহু, কোমল দেহ, মধুময় বুক ও চন্দ্রিমা মুখ আপনাকে প্রগাঢ় উষ্ণতায় আচ্ছন্ন করে রাখে, তা কি আপনার জৈবিক চাহিদার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে?"
বস্তির রাত, প্রায় ৩টা। ছিটেফোটা বৃষ্টির আনাগোনা। চারিদিকে অমবস্যার অন্ধকার। মেঘের স্বর্ণালি লাইম লাইট। চলছে, আমার মায়ের মাতৃত্ব লাভের যুদ্ধ। কি সে মলিন এক দুঃসহ তৈল চিত্র!
নির্ভার বাহু, নিলাভ দেহ, কষ্টময় বুক ও ব্যাথাময় চন্দ্রিমা মুখ। চর্তুরপাশ সন্তান জন্মদানের আর্ত চিৎকার।
কোন কিছু না বুঝেই আশেপাশে জড়ো হয়েছে অনেকেই। তবে বেশির ভাগই উৎসুক! সবারই সহযোগীতার গাড়ী আছে। কিন্তু ইচ্ছে নেই। ফলে মায়ের প্রসব বেদনার আর্তনাদ কারো মন গলাতে পারছেনা তখনও।
এগিয়ে এল পুলিশ। ফিরিয়ে নিল মুখ। বেচারা রিকশাচালক আমার বাবা কিংকর্তব্যবিমুড়। অবশেষে এক নাইট গার্ডই হাত বাড়ালো মাতৃত্ব যুদ্ধরত আমার মায়ের দিকে। দৌড়েগেলেন ধাত্রী আনতে। তখনও আমার বাবা আত্মভোলা।
হটাৎ করে নতুনত্বের আবির্ভাবের কর্ণচড়া শব্দ। বুঝলাম, এ হেরেমে এসেছে বুঝি, পৌরষ্য গণিমতের মাল বণ্টনের মহানায়ক, "আমার ভাই"। তখন আমি আনন্দে আত্মহারা।
এমন সময় নাইটগার্ড ধাত্রী নিয়ে হাজির। আহ কি আনন্দ! আমি যে "বড় বোন"। আর আমার বাবা, বেচারা রিকশাচালক মুখ চাওয়া চাওয়িতে ব্যস্ত। কি করবে বুঝতেই পারছে না। তবুও তার মুখে এক চিলতে হাসি। তাঁরও হৃদয়ে যে পিতৃত্বের টান। আহ কি স্বর্গীয় পরিবেশ।
কিন্তু বিধি বাম! কিছুক্ষণ পরেই যমরুপি ধাত্রী জানালেন; "মাতৃত্ব যুদ্ধে রক্তাত্তপ্রান্তরে রক্তক্ষরণে শহীদ হয়েছেন মাতৃত্ব যুদ্ধরত এক মা"!
আহ, এই হচ্ছে মা! আমার মা! আমাদের মা! আমাদের পৃথিবী!
তাই, অনাগত আমিও এক মাতৃত্ব যোদ্ধা মা হয়ে জানতে চাই, আমার মায়ের কাছে। আমার বাবার কাছে আর আমার ভাইয়ের কাছে -
আচ্ছা, মা-
তুমি কি করে মাল হও?
তুমি কি করে মাগী হও?
তুমি কি করে বেশ্যা হও?
তুমি কি করে খানকি হও?
তুমি কি করেই বা যৌন উত্তেযক হও?
আচ্ছা, ভাই-
তোমার কি করে ইচ্ছে করে
অনাগত ৪ বছরের ছোট্ট মাকে ধর্ষণ করতে?
তোমার কি করে ইচ্ছে করে
স্কুল মোড়ে বসে কামনার কুটুক্তি "মাল" বলে ডাকতে?
তোমার কি করে ইচ্ছে করে
ওড়নার নিচের জীবনদানকারী মাংশল পিণ্ডটার দিকে চোখ দিতে?
আচ্ছা, বাবা-
তোমাদের বিশেষ সেই মুহূর্তে একবারও কি আমার মায়েদের সেই নির্ভার বাহু, নিলাভ দেহ, কষ্টময় বুক ও ব্যাথাময় চন্দ্রিমা মুখ আর রক্তাত্তপ্রান্তরে সন্তান জন্মদানের আর্ত-চিৎকার কি কানে ভাসে না? তখনও কি রক্তভেজা পিচ্ছিল গহ্বরটা আপনার জৈবিক চাহিদার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে?
থামাও ধর্ষণ, বাঁচাও দেশ।
দেখ তোমার মায়ের বেশ।
No comments:
Post a Comment