05/09/2017

একটি অজানা শঙ্কা ও আগাম প্রেম বিচ্ছেদ !!!

কালের কলম // আরিফুল ইসলাম

প্রিয়তমা আমার : কোন এক দিনে তুমি আমার উপর ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে তোমার পরিবারকে বলে দিবে, "পরিবারের সম্মতিতে তোমার বিয়ে করতে আপত্তি নেই"!

তুমি সবসময় চেয়েছো, সাজানো গোছানো ছোট্ট একটা সংসার এবং ছোট ছোট হাত-পা’ওয়ালা ফুট-ফুটে চাঁদের মত একটা বাবু সোনা।

-কিন্তু আমি বরাবরই উদাসীন, খামখেয়ালিতে ভরা এবং স্বপ্নহীন এক যুবক।

-তুমি আমায় অনেক বুঝিয়েছো, কিন্তু আমি বুঝিনি।

-দিনের পরে দিন অপেক্ষা করেছো, কিন্তু তাও বুঝিনি। অবশেষে তোমার এই সিদ্ধান্ত-

জান আমার: একটি নিদিষ্ট দিনে তোমার বিয়ে হবে। কতো আনন্দ করবে তোমার বাড়ির সবাই। তোমার বাবার আত্মার শান্তি পাবে। তোমার মাও মরতে পারবে নিঃশ্চিন্তে।

সেদিন তুমি লাল শাড়ী পড়বে। কি সে অপূর্ব লাগবে তোমায়। যা দেখে তোমার দুলাভাইরা মনে মনে ভাববে "ইশ আগে যদি বিয়ে না করতাম"! আর সে কথা আস্তে আস্তে তোমার কানে এসে বলে যাবে আর তুমি মুচকি হেসে বলবা "দূর'হ"।

কত কল্পনার আল্পনা এঁকে বসে থাকবে মনে মনে। তোমার দেবতা তোমাকে মোটর সাইকেলের পিছে বসিয়ে নিয়ে যাবে তোমার কল্পনার সংসারে। আর তোমার মেঘলা চুল গুলো বাতাসে উড়বে। কি সে অপূর্ব এক দৃশ্য। হঠাৎ ব্রেকে ছোট্ট একটা চাপ আর ওমনি তোমার বুক তোমার দেবতার পিঠে আলতো করে ছু'লে তোমার দেবী কণ্ঠ বলে উঠবে "এই আস্তে চালাও" তোমার দেব বলে উঠবে আমাকে শক্ত করে ধরো! কি এক ভালোলাগা তাই না?

তারপর বাড়ি ফিরবা।

সন্ধ্যায় তুমি সাদা শাড়ী পরে বসে থাকবে কখন তোমার দেবতা আসবে সেই অপেক্ষায়; গায়ে পানি ছিটিয়ে দিবে, চিমটি কাটবে, লাথি মারবে আবার কপালটা ধরে ছোট্ট চুমু এঁকে দিবে তার ললাটে। কত সুন্দর হবে সে খুনসুটি যেনো "বেহেস্তের ফুলের বাগান"।

তুমি আমাকে নিয়ে ভাবতে আর আমার বুকে মাথা রেখে দুচোখ বুজে কল্পনার রাজ্যে ঘুরে ঘুরে বলতে এগুলো।  

প্রথম যেদিন শুনবো তোমার বিয়ে,
আমি বলবো-
"ধুর, তা হতেই পারে না"।

তারপরে তোমার ফোনে ফোন দিতেই "এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না"। তারপর তোমার মেসেঞ্জারে টেক্সট করতে যেয়ে দেখবো আমি "ব্লকড"! ইমো, হোয়াটস্যাপ, ভাইবারে মেসেজ সেন্ডই  হচ্ছে না। মানে আনইনস্টল করা।

কিন্তু সে দিন থেকে বুঝবো আর পুড়বো।

আমার ইমো, হোয়াটস্যাপ, ভাইবার স্থির হয়ে যাবে। টুং টাং শব্দ করে একটা মেসেজও আর আসবে না। সারাদিন ফোন করে কেউ খোঁজ নিবে না।

সে দিন থেকে আমার পায়ের নীচের মাটি একটু একটু করে দিনে দিনে সরে যাবে।

হৃদয় নন্দিনী আমার : আমি কখনো তোমায় বুঝাতে পারবোনা জানি‘ আসলে আমি এমনই, একটু বেহিসাবি, একটু খামখেয়ালি, একটু উদাসীন। পৃথিবীতে সবাই কি সব গুনাবলী নিয়ে জন্মগ্রহণ করে? বলো?

কিন্তু আমি একটা বিষয় নিয়ে জন্মেছিলাম। আর তা হলো "অন্ধভাবে বিশ্বাস এবং অফুরন্ত ভালোবাসার স্পৃহা নিয়ে"।

কিন্তু বাস্তবতা এবং আগামীর ক্যালকুলেশনে আমি হয়তো বড়ই বেমানান।

তাই তোমার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগতম!

প্রিয় স্বপ্নচারণি আমার: যখন তুমি কোনো অনাগত সন্তানের মা, কারো আদর্শ স্ত্রী এবং কোন সংসারের আদর্শ ঘরনী হবে। তখন আমি হবো মৃত্যু পথযাত্রায় মুক্তি ব্রত এক বেহিসাবি যুবক।

-যদি কোন একক্ষনে  শুনতে পাও, কোন এক ফালতু ছেলে মাটির এই পৃথিবী থেকে মুক্তি নিয়েছে।তখনও কি তোমার চোখের কোণের সেদিনের ঝরানো জল কি এ ফালতু ছেলের জন্য একটুও ঝরবে?

-যদি জানতে পারো, যে হাত দুটো ধরে একসময় কত সহস্র মাইল পথ চলেছিলে এবং সহস্র লক্ষাধিক স্বপ্ন একেঁছিলে, সেই হাত দুটো আজ নিথর পড়ে আছে। তবে তোমার কি কিছু মনে হবে?

-যদি সেদিন রাতে, তোমার দেবতা তোমাকে বিছানায় ডাকে, তোমার দেবতা যদি খুব করে চায় "তোমাকে যুগলবন্দী" করতে! তবে সে দিন কি আমার আত্নার শান্তি কামনায়, তুমি কি তাকে না করতে পারবে?

না কি যোগ্য দেবতার যোগ্য দেবী হয়ে তাকে বুকের মধ্যে টেনে নিবে?
না কি তোমার সব অতীত মুছে গিয়ে, তোমার দেবতার পিঠের চামড়া তোমার হাতের নখের মধ্যে চলে আসবে?

নাহ, তা আমি আর চাই না!

“চাই এ পৃথিবী থেকে মুক্তি "

No comments:

Post a Comment